বরগুনায় শ্যালিকাকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ২ শিশুকে কুপিয়ে হত্যা অভিযুক্ত দুলাভাইকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক বেগম লাইলাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। একইসাথে আসামীর শ্যালিকা রিগানকে ধর্ষণ চেষ্টার অপরাধে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়া ভিকটিম রিগানকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগে আরও ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী রিগানের সঙ্গে তার স্বামীর পারিবারিক কলহের জের ধরে মামলা চলে আসছিলো। যে কারণে রিগান একমাত্র শিশু কন্যা তাইফাকে নিয়ে বাবার বাড়ি বসবাস করতেন। এ সুযোগে ২০২২ সাল থেকে রিগানের প্রতি কুনজর পড়ে আপন বড় বোনের জামাই ইলিয়াস পাহলানের। অনৈতিক কাজের জন্য একাধিকবার উত্ত্যক্ত করে আসছিল রিগানকে। তবে রিগান দুলাভাইয়ের অনৈতিক এ প্রস্তাবে রাজি হননি। এ কারণে শ্যালিকা রিগানের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল ইলিয়াস।
২০২৩ সালের ৩ আগস্ট রিগানের মা বেড়াতে যান দুলাভাই ইলিয়াসের বাড়িতে। তাই বাড়িতে একা থাকতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রতিবেশী হাফিজুল (১৩) ও ৩ বছরের শিশু কন্যা তাইফাকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। এদিকে শাশুড়ি বাড়িতে নেই নিশ্চিত যেনে ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট (রাত ১২.২০ থেকে ৪টা) গভীর রাতে দরজা ভেঙ্গে রিগানের বাড়িতে প্রবেশ করে দুলাভাই ইলিয়াস। এরপর চেষ্টা চালায় রিগানকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার। কিন্তু রিগান এতে বাঁধা দেয় এবং এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় ইলিয়াস রিগানের হাত থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রথমে রিগানকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় পাশে ঘুমানো হাফিজুলের ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং ইলিয়াসকে বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। পরে রিগানের ৩ বছরের শিশু কন্যাকেও কুপিয়ে চলে যায়। হাফিজুল একই উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের গোলাম খবিরের ছেলে। ওইদিন হাফিজুল খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো।
পরেরদিন সকালে প্রতিবেশীরা গিয়ে হাফিজুলের মরদেহ এবং রিগান ও তাঁর মেয়েকে গুরুত্বর জখম অবস্থায় দেখতে পায়। পরে বরগুনা থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাফিজুলের মরদেহ উদ্ধার এবং রিগান ও মেয়ে তাইফাকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিগান ও তাঁর মেয়েকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে তাইফা মারা যান।
এদিকে ঘাতক ইলিয়াস রাতে কুপিয়ে বরগুনা শহরের আবাসনে গিয়ে তার নিজের বাসায় ঘুমান। সকালে হত্যার খবর পেয়ে অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সাথে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ তাকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করে ইলিয়াস এবং হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (দা) ওই বাড়ির পুকুর থেকে উদ্ধার করে দেয়।
খুলনা গেজেট/জেএম